শিক্ষা ব্যবস্থাপনা:
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধীন দপ্তর/সংস্থাসমূহ বাংলাদেশে শিক্ষা সংক্রান্ত সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করে থাকে।
শিক্ষার বিভিন্ন ধারা:
প্রথামিক শিক্ষা, সাধারণ ও মাদ্রাসা এ দুই প্রধান ধারায় পরিচালিত। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা এ তিনটি ধারায় পরিচালিত। উচ্চ শিক্ষাও তিনটি ধারায় পরিচালিত। সাধারণ (বিজ্ঞান ও ফলিত বিজ্ঞান, কলা, ব্যবসায় শিক্ষা ও সামাজিক বিজ্ঞান), মাদ্রাসা এবং টেকনোলজি শিক্ষা। টেকনোলজি শিক্ষার মধ্যে কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, টেক্সটাইল, লেদার এবং আইসিটি অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ শিক্ষার মত মাদ্রাসা শিক্ষায়ও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে একই ধরনের বিষয় পড়ানো হয় তবে ধর্মীয় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ গঠন করা হয়েছে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষন ও মূল্যায়ন করে থাকে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা ও পরিদর্শন কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর:
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একটি অধিদপ্তর। কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় । গত অর্ধ শতকে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশাসনের বহু শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটেছে। অধিদপ্তরের মূল কাজ ৪টি যথাঃ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা, একাডেমিক কার্যক্রমের তদারকীকরণ এবং কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করা।
অধিদপ্তরাধীন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট সংখ্যা ২০০ টি। তিনটি স্তরে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যথাঃ সার্টিফিকেট স্তর, ডিপ্লোমা স্তর ও ডিগ্রী স্তর। সার্টিফিকেট পর্যায়ে রয়েছে ১৩৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এবং ১টি ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট। ডিপ্লোমা পর্যায়ে ৫০টি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট এবং ডিগ্রী পর্যায়ে ১টি টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরটি এফ-৪/বি, শের-ই-বাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকা, আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭ এ অবস্থিত।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড:
তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষা পরিচালনা ও সনদপত্র প্রদানের জন্য ১৯৫৪ সালে তদানিন্তন বাণিজ্য ও শিল্প বিভাগ-এর Vide Resolution No. 188-Ind. Dated 27-01-54 মোতাবেক “ইস্ট পাকিস্তান বোর্ড অব এক্সামিনেশন ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন” নামে একটি বোর্ড স্থাপিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সংগঠন পরিচালন, তদারিক, নিয়ন্ত্রন এবং উন্নয়নের দায়িত্ব পালন, পরীক্ষা পরিচালনা, নিয়ন্ত্রন ও বোর্ড কর্তৃক গৃহীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিবর্গকে ডিপ্লোমা/সাটির্ফিকেট প্রদান।
অতঃপর ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ট্রেড পর্যায়ের পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ, সনদপত্র প্রদান, পরিদর্শন ও মূল্যায়নের জন্য একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ফলে ১৯৬৭ সালের ৭ মার্চ গেজেট নং -১৭৫ এল.এ. প্রকাশিত এবং ১ নং সংসদীয় আইনের বলে “ইস্ট পাকিস্তান টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড“ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়, যার বর্তমান নাম বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড:
জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নেকটার), বগুড়া (ভূতপূর্ব নট্রামস), শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণামূলক একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে দেশের সাচিবিক বিজ্ঞানের উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য ‘‘জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী’’ সংক্ষেপে নট্রামস প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে প্রযুক্তির বিকাশ ও যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সরকার ২০০৫ খ্রিঃ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ১২ নং আইনের মাধ্যমে ভূতপর্ব “নট্রামস” বিলুপ্ত করে জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করে।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই):
প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ১৯৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার গজীপুরের বোর্ড বাজারে সাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ইউনিটের জন্য যে জায়গাটি বরাদ্দ ছিলো সেই জায়গাটি অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে “মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট শীর্ষক প্রকল্প” এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯৯ সালে বিএমটিটিআই এ প্রকল্পের অর্থে মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য সর্বপ্রথম প্রশিক্ষণ কোর্স আরম্ভ হয়।
বিএমটিটিআই এর রয়েছে একটি বোর্ড অব গভর্নরস। যার সভাপতি হলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মহোদয়। এর জন্য রাজস্বখাতে ৪৪ জন জনবলসহ মোট ৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।
মাদ্রাসা প্রধান ও সহকারি প্রধানদের জন্য শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কোর্স(তিন সপ্তাহ মেয়াদী), সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষদের জন্য শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কোর্স(তিন সপ্তাহ মেয়াদী), এবতেদায়ী মাদারাসা প্রধানদের জন্য “শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কোর্স”(দুই সপ্তাহ মেয়াদী), সিনিয়র মাদরাসার প্রভাষক/সহকারি অধ্যাপকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক (আরবি, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান) প্রশিক্ষণ কোর্স(চার সপ্তাহ মেয়াদী) পরিচালনা করা হয়। ২০১২ সেশন থেকে মাদরাসা থেকে যারা ফাজিল পাস করেছেন কিংবা বিএ পাস করেছেন তাদের এক বছর মেয়াদী চাকুরীপূর্ব প্রশিক্ষণ কোর্স তথা “ব্যাচেলর অব মাদরাসা এডুকেশন” (বিএমএড) কোর্স আরম্ভ হয়।